টেম্পুর দুই পাশে ৬ জন করে ১২ জন। সামনে চালকের পাশে বসেছেন ১ জন। বাইরে কিশোর সহকারীর সঙ্গে বাদুরঝোলা হয়ে আছেন আরও ১ জন। কয়েকজনের মুখে মাস্ক থাকলেও অধিকাংশ যাত্রীর কাছে নেই।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দিক থেকে দেশের সব জেলাকে ছাড়িয়ে চট্টগ্রামে যখন করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৮ হাজার, তখন নগরের চকবাজার এলাকায় সোমবার (২৯ জুন) সকালে দেখা মিললো এমন চিত্রের।
শুধু চকবাজার এলাকায় নয়। মুরাদপুর, ২ নম্বর গেট, জিইসি, ওয়াসা, অক্সিজেন, লালখানবাজার, কাজীর দেউড়িসহ চট্টগ্রাম নগরের অধিকাংশ এলাকায় গণপরিবহনের চিত্র এমনই। যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হলেও গণপরিবহনের ‘বাদুরঝোলা’ চিত্রে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
করোনার এই সময়ে ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়ায় আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলাচলের সরকারি নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না কোথাও। বাড়তি ভাড়া আদায় করে যাত্রী ভর্তি গাড়ি নিয়ে গন্তব্যে ছুটছেন চালকেরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অফিস-আদালত খুলে দেওয়ার পর গণপরিবহনে যাত্রীর চাপ এখন আগের মতোই। গণপরিবহনের সংখ্যা না বাড়ায় করোনাকালে এই চাপ সামলানো যাচ্ছে না। তাই স্বাস্থবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলাচল সম্ভব হচ্ছে না।
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার পর ১ জুন থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয় সরকার। চট্টগ্রামে গণপরিবহন চলাচলে স্বাস্থবিধি মানার কর্মপন্থা ঠিক করতে ৩০ মে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকে বসে পুলিশ।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুবর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে গাড়িকে নিয়মিত জীবাণুমুক্ত রাখা, চালক-সহকারী-যাত্রী সবার বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান এবং গণপরিবহনের অর্ধেক আসনে যাত্রী নিয়ে চলাচলসহ ১৬টি নির্দেশনা দেওয়া হয় পুলিশের পক্ষ থেকে।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও বিস্তার প্রতিরোধে গণপরিবহনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে পুলিশ কঠোর হবে বলেও সভায় হুঁশিয়ারি দেন সিএমপি কমিশনার মো. মাহবুবর রহমান।
১ জুন থেকে ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়ায় স্বাস্থবিধি মেনে গণপরিবহন চলাচল শুরু হলে কয়েকদিন এইসব নির্দেশনা মেনে গণপরিবহন চলাচল করে। জেলা প্রশাসন, বিআরটিএ, পুলিশের পক্ষ থেকেও কঠোর নজরদারি করা হয়। তবে আস্তে আস্তে তা শিথিল হয়ে আসে।
দ্বিগুণ ভাড়া নিয়ে যাত্রী ভর্তি বাস চালুর বিষয়ে ১ নম্বর রোডের বাস চালক মো. আলমগীর বলেন, গাড়ি নিয়ে দাঁড়াতেই পারি না। যাত্রীরা হুড়োহুড়ি করে উঠে যায়। কেউ কারও কথা শোনে না। এখানে আমরা কি করবো?
তবে বাস ভর্তি যাত্রী নিয়েও দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আকমল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, সড়কে গাড়ি নেই, সিএনজি ভাড়াও বেশি। বাধ্য হয়েই ভিড়ের মধ্যে বাসে উঠি।
তিনি বলেন, সরকার অর্ধেক যাত্রী নেওয়ার জন্য ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়া নিতে বলেছে। এখন বাস ভর্তি যাত্রী নিয়েও কেনো দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়া হবে? করোনার সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে অতিরিক্ত খরচ ভোগান্তিই বাড়াচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি বেলায়েত হোসেন বাংলানিউজকে জানান, কিছু বাসে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া হচ্ছে। এটা সত্য। তবে অধিকাংশ বাসে অর্ধেক যাত্রীও পাওয়া যাচ্ছে না। যেসব বাসে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
‘যাত্রী আগের মতো নেই। কমে গেছে। মানুষ এখন অনেক সচেতন। বের হচ্ছে না। তাই সরকার নির্দেশিত বাড়তি ভাড়া আদায় করতে হবে। ভাড়া আগের অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’ দাবি করেন এই পরিবহন মালিক নেতা।
সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) মো. আবুবকর সিদ্দিক বাংলানিউজকে জানান, গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কী না- তা তদারকি করতে সিএমপির অভিযান অব্যাহত আছে। কোথাও অনিয়ম দেখলে আইন প্রয়োগ করা হবে।
ডিজাইন: নাগরিক আইটি (Nagorikit.com)